Bronchodilators ( শ্বাসকষ্টের ঔষধ )

ব্রঙ্কোডাইলেটর হলো এক ধরণের ওষুধ যা শ্বাসনালীর মাংসপেশিকে শিথিল করে এবং শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে শ্বাস নেওয়া সহজ করে তোলে। হাঁপানি (Asthma), ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের চিকিৎসায় এটি বহুল ব্যবহৃত ঔষধ।   

 

ব্রঙ্কোডাইলেটর প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

  • স্বল্প-মেয়াদী ব্রঙ্কোডাইলেটর (Short-acting bronchodilators): এগুলো দ্রুত কাজ করে এবং হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বা অ্যাজমার আক্রমণ হলে তা উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এদের "রেসকিউ" বা "রিলিভার" ইনহেলারও বলা হয়। এদের কার্যকারিতা সাধারণত কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। উদাহরণ: সালবিউটামল (Salbutamol), লিভালবিউটামল (Levalbuterol)।   
  • দীর্ঘ-মেয়াদী ব্রঙ্কোডাইলেটর (Long-acting bronchodilators): এগুলো ধীরে ধীরে কাজ করে এবং শ্বাসনালীকে দীর্ঘ সময় ধরে খোলা রাখতে সাহায্য করে। এগুলো হাঁপানি ও COPD-এর নিয়মিত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং হঠাৎ শ্বাসকষ্ট উপশমের জন্য নয়। এদের কার্যকারিতা ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। উদাহরণ: সালমেটেরল (Salmeterol), ফরমোটেরল (Formoterol)।   

এছাড়াও, কার্যকারিতার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ব্রঙ্কোডাইলেটরকে আরও কয়েকটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:

  • বিটা-২ অ্যাগোনিস্ট (Beta-2 agonists): এই ওষুধগুলো শ্বাসনালীর মাংসপেশিতে অবস্থিত বিটা-২ রিসেপ্টরগুলোকে উদ্দীপিত করে, যার ফলে মাংসপেশি শিথিল হয় এবং শ্বাসনালী প্রসারিত হয়। স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় ধরনের বিটা-২ অ্যাগোনিস্ট পাওয়া যায়।   
  • অ্যান্টিকোলিনার্জিক (Anticholinergics): এগুলো অ্যাসিটাইলকোলিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা বন্ধ করে শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। অ্যাসিটাইলকোলিন শ্বাসনালীর মাংসপেশিকে সংকুচিত করতে পারে। সাধারণত COPD-এর চিকিৎসায় এটি বেশি ব্যবহৃত হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে হাঁপানির চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হয়। স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় ধরনের অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ রয়েছে।   
  • থিওফাইলিন (Theophylline): এটি শ্বাসনালীর মাংসপেশিকে শিথিল করে এবং শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। তবে এর কার্যকারিতা অন্যান্য ব্রঙ্কোডাইলেটরের তুলনায় কিছুটা দুর্বল এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হতে পারে। বর্তমানে এটি তেমন একটা ব্যবহৃত হয় না।   

ব্রঙ্কোডাইলেটর নিম্নলিখিত রোগগুলির লক্ষণ উপশম করতে ব্যবহৃত হয়:

  • হাঁপানি (Asthma)
  • ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), যেমন - এমফিসেমা (Emphysema) এবং ক্রনিক ব্রংকাইটিস (Chronic Bronchitis)
  • ব্রঙ্কিয়েকটেসিস (Bronchiectasis)
  • অন্যান্য শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ

হাঁপানির ক্ষেত্রে, দীর্ঘ-মেয়াদী ব্রঙ্কোডাইলেটর সাধারণত ইনহেল্ড কর্টিকোস্টেরয়েডের সাথে ব্যবহার করা হয়, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। COPD-এর প্রাথমিক চিকিৎসায় স্বল্প বা দীর্ঘ-মেয়াদী ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করা হয়।

ব্রঙ্কোডাইলেটর বিভিন্ন উপায়ে গ্রহণ করা যেতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো:

  • ইনহেলার (Inhaler): এটি একটি ছোট ডিভাইস যা ওষুধকে সরাসরি শ্বাসনালীতে স্প্রে করে পৌঁছে দেয়। বিভিন্ন ধরনের ইনহেলার রয়েছে, যেমন - মিটারড ডোজ ইনহেলার (MDI) এবং ড্রাই পাউডার ইনহেলার (DPI)।   
  • নেবুলাইজার (Nebulizer): এটি একটি মেশিন যা তরল ওষুধকে মিহি কুয়াশার মতো করে এবং মাস্ক বা মুখবন্ধনীর মাধ্যমে শ্বাস নেওয়া হয়। এটি তীব্র শ্বাসকষ্টের সময় বা ছোট বাচ্চাদের জন্য উপযোগী।   
  • ট্যাবলেট বা সিরাপ (Tablet or Syrup): কিছু ব্রঙ্কোডাইলেটর ট্যাবলেট বা সিরাপ আকারেও পাওয়া যায়, তবে ইনহেলারের তুলনায় এদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হতে পারে।   
  • ইনজেকশন (Injection): মারাত্মক শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে কিছু ব্রঙ্কোডাইলেটর ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে।

ব্রঙ্কোডাইলেটরের কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা সাধারণত হালকা এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • হাত কাঁপা (Tremors)   
  • মাথা ব্যাথা (Headache)
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন (Palpitations)
  • পেশী খিঁচুনি (Muscle cramps)   
  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া (Dry mouth)   
  • কাশি (Cough)
  • বমি বমি ভাব (Nausea)

থিওফাইলিনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে, যেমন - বমি, ডায়রিয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং ঘুমের সমস্যা।

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিরল, তবে দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সতর্কতা:

ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহারের আগে আপনার ডাক্তারকে আপনার অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা এবং আপনি যে ওষুধ খাচ্ছেন সে সম্পর্কে অবশ্যই জানান। কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন - হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যা, এবং গ্লুকোমা থাকলে ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকালে ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

ব্রঙ্কোডাইলেটর শ্বাসকষ্টের লক্ষণ উপশম করে, কিন্তু এটি রোগের মূল কারণের চিকিৎসা নয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য ওষুধ এবং চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

Bronchodilators এর উদাহরণ: