ভাইরাসজনিত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলো ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাকে ব্যাহত করে কাজ করে, যার ফলে শরীরে ভাইরাসের সংখ্যা কমে যায় এবং রোগের লক্ষণগুলো হ্রাস পায়। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিকের মতো নয়; অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য কাজ করে, ভাইরাসের জন্য নয়।
বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিছু সাধারণ উদাহরণ হলো:
- ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu): ওসেলটামিভির (Oseltamivir), জানামিভির (Zanamivir), পেরামিভির (Peramivir), ব্যালোক্সাভির মারবক্সিল (Baloxavir marboxil)।
- হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (Herpes Simplex Virus - HSV): অ্যাসাইক্লোভির (Acyclovir), ভ্যালাসাইক্লোভির (Valacyclovir), ফ্যামসিক্লোভির (Famciclovir)।
- ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস (Varicella-Zoster Virus - VZV) (চিকেনপক্স এবং shingles): অ্যাসাইক্লোভির (Acyclovir), ভ্যালাসাইক্লোভির (Valacyclovir), ফ্যামসিক্লোভির (Famciclovir)।
- সাইটোমেগালোভাইরাস (Cytomegalovirus - CMV): গানসাইক্লোভির (Ganciclovir), ভ্যালগানসাইক্লোভির (Valganciclovir), ফস্কারনেট (Foscarnet), সিডোফোভির (Cidofovir)।
- হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B): এন্টেকাভির (Entecavir), টেনোফোভির (Tenofovir), ল্যামিভুডিন (Lamivudine), অ্যাডেফোভির (Adefovir), টেলাবিভুডিন (Telbivudine), ইন্টারফেরন আলফা (Interferon-alpha)।
- হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C): বিভিন্ন ডিরেক্ট-অ্যাক্টিং অ্যান্টিভাইরাল (Direct-Acting Antivirals - DAAs) যেমন সোফোসবুভির (Sofosbuvir), ডালাসিবুভির (Daclatasvir), সিমেপ্রেভির (Simeprevir), রিবাভাইরিন (Ribavirin), এবং সমন্বিত ওষুধ।
- হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (Human Immunodeficiency Virus - HIV): অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ (Antiretroviral drugs) এর একটি শ্রেণী যা ভাইরাসের প্রতিলিপি দমন করে এবং রোগ progression কমায়। এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিওসাইড রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ ইনহিবিটর (NRTIs), নন-নিউক্লিওসাইড রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ ইনহিবিটর (NNRTIs), প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর (PIs), ইন্টিগ্রেজে ইনহিবিটর (INSTIs), ফিউশন ইনহিবিটর (Fusion Inhibitors), এবং CCR5 অ্যান্টাগনিস্ট (CCR5 antagonists)।
- কোভিড-১৯ (COVID-19): রেমডেসিভির (Remdesivir), প্যাক্সলোভিড (Paxlovid) (নিরমাটেলভির এবং রিটোনাভিরের সমন্বয়), মলনুপিরাভির (Molnupiravir)।
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (Side Effects of Antivirals):
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ওষুধের ধরণ, ডোজ এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো:
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- ডায়রিয়া
- মাথাব্যথা
- ক্লান্তি
- পেটে ব্যথা
- ক্ষুধামান্দ্য
- ত্বকের ফুসকুড়ি
কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হতে পারে, যেমন:
- কিডনির সমস্যা
- লিভারের সমস্যা
- রক্তাল্পতা
- স্নায়বিক সমস্যা
- অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি।
গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ শুধুমাত্র ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় কার্যকর, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য নয়।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়।
- অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করা গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি লক্ষণগুলো ভালো হয়ে গেলেও।
- কিছু ভাইরাস সময়ের সাথে সাথে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।