প্রোটিন কি?
প্রোটিন হলো একটি মৌলিক পুষ্টি উপাদান যা জীবের বৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং শরীরের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এটি গ্রিক শব্দ "প্রোটোস" থেকে এসেছে, যার অর্থ "প্রথম" বা "প্রাথমিক"।
আমাদের পেশী, টিস্যু, হাড়, ত্বক, এবং গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক কার্যাবলী যেমন এনজাইম ও হরমোনের উৎপাদনে প্রোটিন বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
প্রোটিনের গঠন
প্রোটিন মূলত অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত, যা পেপটাইড বন্ডের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
প্রোটিনের গঠন চারটি স্তরে বিভক্ত:
- প্রাথমিক স্তর: অ্যামিনো অ্যাসিডের সরল শৃঙ্খলা।
- দ্বিতীয় স্তর: হাইড্রোজেন বন্ডের মাধ্যমে আলফা-হেলিক্স বা বিটা-শীট গঠন।
- তৃতীয় স্তর: তিন-মাত্রিক ভাঁজকৃত কাঠামো।
- চতুর্থ স্তর: একাধিক পলিপেপটাইড চেইনের সমন্বয়ে গঠিত জটিল কাঠামো।
প্রোটিনের প্রকারভেদ
প্রোটিনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
- সম্পূর্ণ প্রোটিন: এতে সকল অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড বিদ্যমান। প্রাণীজ উৎস যেমন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ এগুলোর মধ্যে পাওয়া যায়।
- অসম্পূর্ণ প্রোটিন: এতে কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড অনুপস্থিত। উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন ডাল, বাদাম, বীজ এবং শস্য এ ধরনের প্রোটিনের উৎস।
প্রোটিনের কাজ
প্রোটিন শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
- শরীরের গঠন ও মেরামত: পেশী, হাড়, চুল ও ত্বকের গঠনে সাহায্য করে।
- এনজাইম ও হরমোন উৎপাদন: বিপাকীয় ও অন্যান্য জৈবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- শক্তি উৎপাদন: শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
প্রোটিনের উৎস
- প্রাণীজ উৎস: মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, দই, পনির।
- উদ্ভিজ্জ উৎস: ডাল, বাদাম, সয়াবিন, ছোলা, কিনোয়া, শস্য।
দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা
প্রতিদিন শরীরের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করা জরুরি। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, ওজন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রোটিনের চাহিদা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য পুষ্টি সংস্থাগুলোর মতে, সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।
সূত্র: প্রোটিনের চাহিদা (গ্রাম) = ওজন (কেজি) × ০.৮ গ্রাম
উদাহরণ: যদি আপনার ওজন ৬০ কেজি হয়, তাহলে আপনার দৈনিক প্রয়োজনীয় প্রোটিন হবে: ৬০ × ০.৮ = ৪৮ গ্রাম প্রোটিন
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রোটিনের চাহিদা
- শিশু ও কিশোরদের জন্য:
- ১-৩ বছর: ১৩ গ্রাম
- ৪-৮ বছর: ১৯ গ্রাম
- ৯-১৩ বছর: ৩৪ গ্রাম
- ১৪-১৮ বছর: ছেলেদের জন্য ৫২ গ্রাম, মেয়েদের জন্য ৪৬ গ্রাম
- গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য:
- গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের চাহিদা ১০-১৫ গ্রাম বেশি হয়
- স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য প্রতিদিন ৭১ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন প্রয়োজন
- ক্রীড়াবিদ ও ভারোত্তোলকদের জন্য:
- সাধারণ ক্রীড়াবিদদের প্রতি কেজিতে ১.২ - ২.০ গ্রাম প্রোটিন দরকার
- ভারোত্তোলক ও বডিবিল্ডারদের ১.৫ - ২.৫ গ্রাম/কেজি পর্যন্ত প্রোটিন প্রয়োজন
- বয়স্কদের জন্য (৫০ বছর বা তার বেশি):
- প্রোটিন গ্রহণ ১.০ - ১.২ গ্রাম/কেজি হওয়া উচিত, কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশি ক্ষয় হয়
খাদ্য থেকে দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের উপায়
প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যুক্ত করা উচিত।
- ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে - ৩১ গ্রাম প্রোটিন
- ১টি ডিমে - ৬ গ্রাম প্রোটিন
- ১ কাপ দুধে - ৮ গ্রাম প্রোটিন
- ১০০ গ্রাম মাছ (সামুদ্রিক) - ২২-২৫ গ্রাম প্রোটিন
- ১ কাপ রান্না করা ডালে - ১৫ গ্রাম প্রোটিন